চীনা বাদামের নাম শুনলে মনে হবে এই দানা ফলটি হয়তো চীন দেশ থেকে এসেছে। কিন্তু তা নয় চীনা বাদামের আদি বাসস্থান নিয়ে পন্ডিতগণের মধ্যে মতভেদ থাকলেও এটা ঠিক যে চীনা বাদাম দক্ষিণ আমেরিকার দানা ফল গাছ, সে বিষয়ে সবাই এক মত। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া প্রভৃতি রাজ্যের কোনটাকে আদি বাসস্থান ধরা হবে তা নিয়ে মতভেদ আছে। হয়তো আরো বহুদিন বাদামের আদি বাসস্থান নিয়ে বিতর্কও চলবে। তবে এটা ঠিক যে ব্রাজিল, পেরু প্রভৃতি পাশা পাশি দেশেই বাদামের আদি বাসস্থান। অষ্টদশ শতাব্দির প্রথমার্ধে অনেক ঘাট পেরিয়ে এই দানা ফল চীনে এসেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এরপর এসেছে ভারতবর্ষে আর এখন এর দেখা সাড়া পৃথিবীতেই পাওয়া যায়।
চীনা বাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বহাইড্রেটস, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন কপার, জিঙ্ক পাওয়া যায়। এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-কপ্লেক্সেও সমৃদ্ধ এই দানা ফল। তাছাড়াও পাওয়া যায় ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও ‘ডি’ এবং এনজাইমস। বেশ কিছু মূল্যবান অ্যামাইনো এসিডও এর মধ্যে বিদ্যমান। এসব ছাড়াও অারও অল্প অল্প অনেক কিছুই চীনা বাদামে পাওয়া যায়। চীনা বাদামের তেল কেবল খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় না, বাদাম তেল নানাবিধ কাজে লাগে। তেল বের করানোর পর যে ছিবড়ে অবশিষ্ট থাকে, তাও প্রোটিনসমৃদ্ধ।
চীনা বাদামের ব্যবহার: চীনা বাদাম খাদ্য ও ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ব্যবহারের পূর্বে একটি দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়, তা হলো-হজমে সমস্য হচ্ছে কিনা, তা লক্ষ্য রাখতে হবে। এটি সহজে হজম হতে চায় না। শুকনো বাদাম ভিজিয়ে খাওয়া যায়, আবার ভেজেও (তেল দিয়ে নয়) খাওয়া চলে। শুকনো বাদম ভেজে ওপরের খোসা বাদ দিয়ে বেটে সরবত তৈরি করেও খাওয়া যায়। ভেষজ হিসেবে কোন কোন ক্ষেত্রে, বা কি জন্য চীনা বাদাম ব্যবহার করা যেতে পারে তা বলা হচ্ছে।
এক। স্নায়ুবিক দৌর্বলে: নানা কারণে এই দুর্বলতা এসে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ যৌবনের গন্ডি পেরুবার পর থেকেই এই দুর্বলতা স্বভাবিকভাবেই আসে। নানা প্রকার রোগে ভোগার পরও মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সব রকম ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চীনা বাদাম ব্যবহার করা যেতে পারে। বালিতে ভাজার পর খোসা ছাড়ানো চীনা বাদাম ১০ গ্রম নিয়ে ভালভাবে বেটে তা এক কাপ পানি ও ২ চা চামচ চিনি মিশিয়ে সরবতের মতে করে প্রত্যক সকালে ও বিকালে দু’বার খাওয়া যেতে পারে। হজমে সমস্যা হলে মাত্রা কম করে ব্যবহার করতে হবে। হজমে সমস্যা না হলে সকাল বিকাল দুইবার খাওয়া যেতে পারে এবং পানির পরিবর্তে দুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। এইভাবে কিছু দিন চীনা বাদাম ভেষজ হিসেবে গ্রহন করলে স্নায়বিক দৌর্বলতা কেটে যাবে।
দুই। শুক্রাল্পতায়: যেভাবেই বা যে কারণেই হোক যাদের প্রচুর যৌন ক্ষমতা ক্ষয় হয়েছে, কিন্তু দেহ-মনে ভোগের বাসনা তীব্রভাবে বিদ্যমান অথচ ফলপ্রসু হয় না, এ জ্বালা বিষম জ্বালা, মরেও যেন সুখ নেই; তখন ভাজা বাদামের (তেলে ভাজা নয়) সরবত দুধ দিয়ে তৈরী করে উপরিউক্ত পদ্ধতিতে দিনে ২ বার করে কিছুদিন খাওয়া যেতে পারে। এর দ্বারা শরীরে পুষ্টি আসবে, শুক্রাল্পতা নষ্ট হবে এবং সেই সঙ্গে দেহ-মনে নতুন করে উন্মাদনার স্রোত বইবে। তবে তারুণ্যের জোয়ারে যারা ভাসতে চান ভাসুন, কিন্তু বয়সটা যাদের ৪০-৫০ এ্রর উপরে তারা একটু ভেবে চিন্তে পা বাড়াবেন।
তিন। প্রসবান্তিক দুর্বলতায় ও স্তন্যাল্পতায়: বর্তমানে আগের যুগের মত মায়েদেরকে ঘন ঘন আঁতুর ঘরে যেতে হয় না, এখন প্রায় সকলেই একটি বা দুটি সন্তান যথেষ্ট মনে করে, তিন সন্তান কমেই গেছে। সুতরাং এই একটি বা দুটি সন্তান যাতে সুস্থ-সবল হতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা বিশেষ কর্তব্য। বিশেষতঃ প্রথম বাচ্চাটা হবার সময়ই ভুলটা হয়ে থাকে। প্রসবের পর দুর্বলতা থাকলে সেদিকে নজর দেয়া এবং বাচ্চার বুকের দুধে কুলোচ্ছে কি কুলোচ্ছে না সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রসূতির প্রধান এবং প্রাথমিক কর্তব্য। প্রসবের ৮-১০ দিন পর থেকে চীনা বাদামের সরবত দুধ অথবা পানি দিয়ে প্রস্তুত করে ৫-৬ মাস খেতে হবে। এর দ্বারা দুর্বলতা কমবে এবং স্তনে দুগ্ধ আসবে। হজমে বিঘ্ন ঘটলে এবং পেটে বায়ু জমলে অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যেস করার সঙ্গে সঙ্গে একটু হজমকারক ঔষধও খাওয়া উচিত।
Comments
Post a Comment